ডোমেইন এবং হোস্টিং কি? কেনার সময় কি বিষয়সমূহ খেয়াল রাখাতে হবে?
ইন্টারনেটের এই যুগে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা যেন প্রায় সব ব্যবসার জন্যই প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ওয়েবসাইট তৈরি করতে গেলে প্রথমেই আসে ডোমেইন ও হোস্টিং কেনার প্রশ্ন। এই দুটি বিষয়ের উপরই নির্ভর করে আপনার ওয়েবসাইটের কার্যকারিতা, গতি, এবং নিরাপত্তা।
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো, ডোমেইন এবং হোস্টিং কি? কেনার সময় কি বিষয়সমূহ খেয়াল রাখাতে হবে?
ডোমেইন এবং হোস্টিং কি?
- ডোমেইন হলো ওয়েবসাইটের নাম বা ঠিকানা। এটি সেই নাম যা ভিজিটররা ব্রাউজারে লিখে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, www.example.com একটি ডোমেইন। ডোমেইন মূলত একটি ইউনিক নাম যা ইন্টারনেটে একবার রেজিস্ট্রেশন করা হলে নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত অন্য কেউ এটি ব্যবহার করতে পারে না।
- হোস্টিং হলো সেই সার্ভার বা জায়গা যেখানে আপনার ওয়েবসাইটের সমস্ত ফাইল, ডেটাবেস এবং কন্টেন্ট সংরক্ষিত থাকে। হোস্টিং ছাড়া ডোমেইনের কোনো কার্যকারিতা নেই কারণ হোস্টিং এর মাধ্যমেই ব্যবহারকারীদের সাইটের কনটেন্টে প্রবেশ করার সুযোগ পায়।
ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার সময় খেয়াল রাখার বিষয়সমূহ
ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা উচিত। কারন এটি ওয়েবসাইটের পারফরমেন্স ও নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলো যা ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার সময় বিবেচনা করা প্রয়োজন:
১. ডোমেইন নামের পছন্দ
ডোমেইন নেম সাধারনত ব্র্যান্ড বা ব্যবসার পরিচয় বহন করে। এটি নির্বাচন করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে:
- সহজ এবং সংক্ষিপ্ত: ডোমেইন নামটি সংক্ষিপ্ত এবং সহজভাবে উচ্চারণযোগ্য হওয়া উচিত।
- ব্র্যান্ড সম্পর্কিত: ডোমেইন নাম আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত এবং স্মরণযোগ্য হওয়া উচিত।
- কমন এক্সটেনশন বেছে নেওয়া: .com, .org, .net এর মতো সাধারণ এবং জনপ্রিয় এক্সটেনশন বেছে নেয়া উচিত, কারণ সেগুলি ব্যবহারকারীদের কাছে বেশি পরিচিত।
২. হোস্টিং টাইপ নির্বাচন
হোস্টিং কোম্পানি গুলোতে দেখা যায় যে বিভিন্ন ধরনের হোস্টিং প্ল্যান রয়েছে এবং তবে আপনার ওয়েবসাইটের ধরন এবং প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে সঠিক হোস্টিং টাইপ নির্বাচন করা উচিত:
- শেয়ারড হোস্টিং: ছোট ব্যবসা বা ব্যক্তিগত ব্লগের জন্য আদর্শ। এখানে একাধিক ওয়েবসাইট একই সার্ভার শেয়ার করে। এটি অন্নান্য হোস্টিং প্যাকেজের তুলনায় সস্তা।
- ভিপিএস হোস্টিং: এখানে ওয়েবসাইকে একটি ভার্চুয়াল সার্ভারে হোস্ট করা হয়, যেখানে শেয়ারড হোস্টিং এর তুলনায় বেশি রিসোর্স পাওয়া যায়।
- ডেডিকেটেড হোস্টিং: বড় ব্যবসা বা উচ্চ ট্রাফিক সাইটের জন্য ডেডিকেটেড সার্ভার বেস্ট। এটি অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে হয় না, তাই এটি বেশি সিকিউর এবং ফাস্ট।
৩. ব্যান্ডউইথ এবং ডিস্ক স্পেস
- ব্যান্ডউইথ: ব্যান্ডউইথ হচ্ছে আপনার সাইট কতটুকু ডাটা ট্রান্সফার করতে পারবে সেটার মাপকাঠি। আপনার সাইট যদি খুব বেশি ভিজিটর পায় বা ভারী কনটেন্ট থাকে, তবে বেশি ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন হবে।
- ডিস্ক স্পেস: ওয়েবসাইটের সমস্ত ফাইল, ইমেজ, ভিডিও এবং ডাটাবেস সংরক্ষণ করার জন্য পর্যাপ্ত স্টোরেজ থাকা জরুরি। ব্যাক্তিগত বা পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে ৫জিবি হোস্টিং স্টান্ডার্ড হিসেবে ধরার যেতে পারে।
৪. আপটাইম গ্যারান্টি
আপটাইম মানে হলো আপনার ওয়েবসাইট কতটুকু সময় অনলাইনে থাকবে। অনেক সময় সার্ভারের সমস্যার কারণে ওয়েবসাইট ডাউন থাকতে পারে, যা ব্যবহারকারীদের বিরক্ত করে। তাই এমন হোস্টিং প্রোভাইডার বেছে নিতে হবে যারা ৯৯.৯% আপটাইম গ্যারান্টি দেয়।
৫. টেকনিক্যাল সাপোর্ট
যেকোনো সমস্যার সমাধান দ্রুত সমাধান করতে টেকনিক্যাল সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই হোস্টিং সার্ভিস নেয়ার জন্য এমন হোস্টিং প্রোভাইডার বেছে নিন যারা ২৪/৭ গ্রাহক সেবা প্রদান করে।
৬. সিকিউরিটি ফিচারস
ওয়েবসাইটকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সিকিউরিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই হোস্টিং কেনার আগে সেই কোম্পানী নিচের সিকিউরিটি ফিচার গুলো দেয় কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে:
- এসএসএল সার্টিফিকেট: এটি আপনার ওয়েবসাইটকে এনক্রিপ্ট করে রাখে এবং ব্যবহারকারীদের নিরাপদে ব্রাউজ করতে সাহায্য করে।
- ডিডিওএস প্রোটেকশন: ওয়েবসাইটকে সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য এই প্রোটেকশন জরুরি।
- ব্যাকআপ সার্ভিস: প্রতিনিয়ত ব্যাকআপ রাখা জরুরি যাতে কোনো তথ্য হারিয়ে গেলে তা পুনরুদ্ধার করা যায়।
৭. মূল্য এবং পেমেন্ট অপশন
ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার সময় মূল্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সার্ভিস কেনার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে:
- রিনিউয়াল ফি: অনেক সময় প্রথমবার কম খরচ হলেও রিনিউয়াল ফি বেশি হতে পারে, তাই আগে থেকেই এ বিষয়ে জেনে রাখা উচিত।
- অতিরিক্ত খরচ: কিছু প্রোভাইডার এসএসএল, ডোমেইন প্রাইভেসি বা অন্যান্য ফিচারের জন্য অতিরিক্ত ফি চার্জ করতে পারে। এগুলোও বিবেচনায় রাখা উচিত।
উপসংহার
ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার সময় সঠিক পরিকল্পনা এবং রিসার্চ প্রয়োজন। সঠিকভাবে ডোমেইন নাম নির্বাচন করা এবং ভালো মানের হোস্টিং প্রোভাইডার বেছে নেওয়া আপনার ওয়েবসাইটের পারফরমেন্স এবং সিকিউরিটি নিশ্চিত করবে।